অনন্ত আচার্যের ঠাকুদাদা রোজ সূর্যোদয়ে স্নান করতেন। মা ঠাকুমা চার বালতি জল বয়ে দিতেন সেই ভোরে। আচারনিষ্ট বামুন ছিলেন। আচারের তলায় এই যে বাড়ির মেয়েদের শ্রম লূণ্ঠন এমন আরো বহু কিছু দেখেই সেই ছেলেবেলাতেই ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়বার শপথটি নিয়েছিলেন অনন্ত আচার্য। নিজেই লিখেছেন ‘চেতনা লহর’এর এই ৬ষ্ট বর্ষ যুগ্ম সংখ্যাতে এক সুললিত গদ্যে –‘অন্তিম জবান বন্দী’। তিনিই সম্পাদনা করেন ভারত খ্যাত দলিত আন্দোলনের এই মুখপত্র । দলিত মানে শুধু দলিত নয়–নারী, সংখ্যালঘু শ্রমিক কৃষক কেমন আছেন এই বর্ণবাদ আর শ্রমশোষণের ‘উন্নত ভারতবর্ষে’ …জানতে হলে যে কাগজ অবশ্যই পড়তে হবে , সে চেতনা লহর। বাকি সংগ্রামী কাগজের সঙ্গে এর তফাৎ হলো জিজ্ঞাসূ সংগ্রামের সাথী বিদ্দজ্জনের লেখালেখির সঙ্গে সংগ্রামী নবীন তরুণদেরও এই কাগজ জায়গা করে দেয়, ভাবতে এবং লিখতে শেখার জন্যে। যা অন্য আর দশটা সংগঠনিক কাগজ থেকে আলাদা। এই যেমন এই সংখ্যাতে অনুবাদে হাজির আম্বেদকর, পেরিয়ার, ভগৎ সিঙ্গের রচনা, তেমনি পুর্মূদ্রণ করেছেন বিনয় ঘোষের ‘বাঙালি বুদ্ধিজীবি’ রচনাটি। এক ধর্মগুরু তাত্ত্বিকের হাতে প্রায় বস্তুবাদীর মতো গীটার সমালোচনার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছেন রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য। বৈদিক আর তান্ত্রিক এই দুই পরিভাষা যে মানসিক এবং কায়িক শ্রমিকদের সঙ্গে সম্পর্কিত দেবীপ্রসাদ ভট্টচার্যের নিবন্ধটি না পড়লে জানা হতো না। অত্যন্ত প্রত্যয়ের সঙ্গে মনোরঞ্জন ব্যাপারী লিখছেন, দেশভাগ না হলে ভারতে দলিত আন্দোলনে নেতৃত্ব দিত বাংলাই, আবার সে বাংলা জাগছে তার চিহ্ন গুলো চিনিয়েছেন তাঁর লেখাতে। আনন্দ টেলমুমব্দের একটি লেখাতে জানা গেল, আম্বেদকরতো কম্যুনিষ্টদের মতোই ভেবেছিলেন, কম্যুনিষ্টরাই তাঁর মতো ভাবতে পারেন নি, সেকালে। সুতরাং লালে নীলে জোট হতে পারে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে না, এই সত্য লালেদের বোঝা চাই। হর্ষবর্ধন চৌধুরী তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন কেমন আছেন সারা ভারতের ৩৫ কোটি অসংগঠিত শ্রমিকরা… মতুয়া আন্দোলনেও কীভাবে জাঁকিয়ে বসেছে ব্রাহ্মণ্যবাদ, তার এক সংক্ষিপ্ত ছবি তুলে দিয়েছেন তরুণ সংগ্রামী এবং গবেষক সুশান্ত কুমার। যারা দেশকে ভালো বাসেন, দেশের মানূষকে ভালো বাসেন, ‘দেশপ্রেমী’দের মতো স্লোগান সর্বস্ব ভালোবাসা নয়, তাঁদের পড়াই উচিত চেতনা লহর। নিচে সূচীপত্র রইল। কিছু ছাপা ভুল চোখে বিঁধবে। এসব এমন কষ্ট করে ছাপানো কাগজে সহ্য করা যায়।