চেতনা লহর একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা । বহু চেষ্টার পর হাতে পেলাম এক মাস আগে । পড়তে দেরি হল । এই সংখ্যায় লিখেছেন রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য, মনোরঞ্জন ব্যাপারী, কণিষ্ক চৌধুরী, সব্যসাচী গোস্বামী, উৎসা আহমেদ, সুনীলকুমার রায়, অনন্ত আচার্য এবং আরও কয়েকজন। কয়েকটি কবিতা আছে আর সঙ্গে আম্বেদকর, পেরিয়ার, ভগৎ সিং, বিনয় ঘোষ এবং দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের অতি মূল্যবান কয়েকটি লেখা । চেতনার লহর কিনা জানিনা তবে এই সংখ্যায় চৈতন্যের প্রকাশ আমাকে মুগ্ধ করেছে । কণিষ্ক চৌধুরী বিবেকানন্দকে নিয়ে কাটাছেঁড়া করেছেন মুন্সিয়ানার সঙ্গে । এই তথাকথিত মহামানবরা আসলে কত ক্ষুদ্র, কত নীতিহীন কতটা ধর্মের নামে অসাধুতার আশ্রয় নিয়ে থাকেন তার প্রামাণ্য তথ্যাদি পরিবেশন করেছেন আমাদের মতো অর্বাচিনদের কাছে । অসাধারণ ।আম্বেদকরের চাতুরবর্ণ্য রচনাটি ভাষান্তর আরও সাবলিল হতে পারত। সহজ বাংলা লেখাটিকে আরও সমৃদ্ধ করত। তবে এটাও ঠিক, বিষয় এবং মূল লেখাটির মরমোদ্ধার করে উপস্থাপন খুবই কঠিন। রোকেয়ার প্রাসঙ্গিকতা লেখাটি সত্যিই কি বেগম রোকেয়াকে তুলে ধরতে পেরে ছেন লেখিকা ? হয়তো স্থানাভাবে হয়ে ওঠেনি । রামকৃষ্ণর লেখা গীতা-র অভিনব এক সমালোচনা অসামান্য । সোহংস্বামীর গীতা সম্পর্কে এই সমালোচনাএভাবে পাওয়াটা একটা প্রাপ্তি বিশেষ । অনন্ত আচার্য মহাশয় দলিত আন্দোলনে একাংশের ছুৎমার্গীতা কী ভয়ঙ্কর তা তাঁর নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বিবৃত করেছেন । এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক অচিন্ত্য বিশ্বাসের একটা লেখা মৃে পরল যে লেখায় উনি দাবি করেছেন, ” যিনি দলিত নন তিনি কখনই দলিত সাহিত্য রচনা করতে পারেন না “। সবশেষে আমার প্রিয় মানুষ মনোরঞ্জন ব্যাপারীর লেখা “দলিতরা জাগছে” প্রসঙ্গে দু একটি কথা । “দলিতরা জাগছে” কথাটা একশ ভাগ সত্য কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে দলিতরা সত্যিই কি জাগছে ? যে উদাহরণগুলি সামনে এনেছেন মনোরঞ্জন বাবু তা কি জেগে ওঠার সত্যিই দিক নির্দেশ করে ? বিপরীতে বঙ্গ বিভাজনের যে কারণগুলি দেখিয়েছেন, আমি তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত । কমগ্রেসের হিন্দি বলয়ের নেতৃত্ব, ঘনশ্যামদাস বিড়লা, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জিরা বহুবিধ কারণে বাংলাকে ভাগ করেছে। নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল যেমন একটা কারণ তেমনই ইস্পাহানিদের তাড়িয়ে বিড়লা সিংঘানিয়াদের মুক্ত বাজারও একটা বড় কারণ ছিল। সঙ্গে ছিল ধর্মের নামে মানুষকে বিভক্ত করে বিষ ছড়ান। যোগেন মন্ডল, আম্বেদকর প্রসঙ্গটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক । বঙ্গ বিভাজনের বিরুদ্ধে ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দি সহ মুসলিম লিগের প্রায় সব প্রথম সারির নেতাই একজোট ছিলেন । শিশির বসুরাও সক্রিয় ছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত গান্ধীজি শেষ পেরেকটি ঠুকে দেওয়ায় বিভাজনটি ঘটেই গেল । দীর্ঘ বামপন্থী শাসনকালে ভোটে আসন সংরক্ষণ ছাড়া দলিত, আদিবাসী, পশ্চাদপদ শ্রেণি বা সমখ্যালঘুরা কোনও গুরুত্ব কখনই পায়নি । সিদ্ধার্থ রায়ের আমলে বাঙালি মুসলমান চারজন ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন। বাম জমানায় চারজন ক্যাবিনেট পর্যায়ে ছিলেন উর্দুভাষী। সেই ট্র্যাডিশন আজও চলেছে। উলঙ্গ ভাবে। খুব খুশি হব, মনোরঞ্জনবাবু শুধু বঙ্গ বিভাজন পর্ব নিয়ে আরও একটা প্রবন্ধ লেখেন। আজকের প্রজন্ম উপকৃত হবে । সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই এই সংখ্যাটির জন্য।